যাকাত দান করবেন কিন্তু যেন লোক দেখানো না হয়। দানের মাধ্যমে গরিবের দুঃখ দূর করুন যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। জাকাতের অর্থ ফকীর, মিসকীনসহ আটটি খাতে ব্যবহার করা যায়। স্বর্ণ, রূপা, ব্যবসা, ফসল ও পশুদের উপর নির্ধারিত হারে যাকাত দিতে হয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। এটি ধনী মুসলমানদের উপর নির্ধারিত একটি বাধ্যতামূলক দান যা দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করার জন্য প্রদান করা হয়। যাকাত শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত-৭) এবং ‘আর তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত-১৯)।
যাকাতের ফজিলত, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দান করবেন। আর তিনিই উত্তম রিজিকদাতা। (সুরা সাবা,আয়াত:৩৯)
হাদিসে আছে, আল্লাহ তাআলা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন সে যদি ঐ সম্পদের যাকাত আদায় না করে, তাহলে তার সম্পদকে কিয়ামতের দিন টাকপড়া বিষধর সাপের রূপ দান করা হবে। যার চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে যা কিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ির মত পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতপর সে সাপটি তার চোয়ালে দংশন করে বলতে থাকবে আমিই তোমার সম্পদ,আমিই তোমার কুক্ষিগত মাল’। (বুখারী শরীফ,১/১৮৮)
সামাজিক বৈষম্য নিরসনে ভূমিকা:
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হল গরিব-দুঃখীদের অভাব দূরীকরণের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠন করা। তাই যাকাত যেনতেনভাবে দিলে হবে না। তা হবে শুধু লোক দেখানো। যাকাত এমনভাবে দিতে হবে যেন গ্রহীতার অভাব দূর হয়, সে স্বাবলম্বী হতে পারে। পরেরবার যাতে তাকে আবার সাহায্যের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়।
যাকাতের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য:
যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। যখন ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের একটি অংশ দরিদ্রদের দান করেন, তখন তা সমাজের সামগ্রিক সম্পদের বন্টনে ভারসাম্য আনে।
দারিদ্র্য বিমোচন: একটি চ্যালেঞ্জ:
বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় দারিদ্র বিমোচন গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে স্থান পেয়েছে বহু পূর্বেই। বিভিন্ন দেশের সরকারের পরিকল্পিত প্রয়াসের ফলে দারিদ্রের প্রকটতা কিছুটা হ্রাস পেলেও এর ব্যাপকতা ও গভীরতা মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়।
জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা:
সর্বোচ্ছ বিশ্ব সংস্থা (জাতিসংঘ) কর্তৃক ঘোষিত Millennium Development Goals এর অন্যতম প্রধান অঙ্গ দারিদ্র বিমোচন। এতো কিছুর পরেও দারিদ্র কমে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
দারিদ্র্যের ভয়াবহ চিত্র:
* মাত্র কয়টা টাকার জন্য নারী তার সতীত্ব পর্যন্ত বিকিয়ে দিচ্ছে।
* মা তার সন্তানকে ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছে।
* ডাষ্টবিনের ময়লা পচা-বাসি খাবার খাওয়ার জন্য কুকুর মানুষ এক সাথে লড়াই করছে।
* প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতিদিন দারিদ্রতার কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে।
* লাখ লাখ বনী আদম তপ্ত মরুভূমিতে খাদ্যহীন, আশ্রয়হীনভাবে উদ্ধাস্ত অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
* আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইরাক, ভারত, সুদান, কঙ্গো তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
* স্বপ্নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আয়হীন পরিবার আছে, যাদের বাৎসরিক আয় ৮/১০ হাজার ডলারের বেশি নয়।
যাকাতের মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাবনা:
যদি আমরা সকলেই যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করি এবং যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানবিকতার প্রতিফলন:
যাকাত মানবিকতার একটি সুন্দর প্রতিফলন। এটি ধনী ব্যক্তিদের দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তার হাত প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের উপর আল্লাহর অধিকার স্বীকার করে এবং তাদের ধন-সম্পদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
যাকাত প্রদানের ক্ষেত্র ও পরিমাণ
যাকাত প্রদানের ক্ষেত্র:
ফকীর: যারা নিজেদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
মিসকীন: যারা নিজেদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে, তবে অন্যের কাছে চাইতে পারে না।
আমিল: যারা যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করে।
মু’আল্লাফাতুল কুলুব: যাদের অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত প্রদান করা হয়।
রিকাব: যারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাদের মুক্তির জন্য জাকাত প্রদান করা হয়।
গারিম: যারা ঋণগ্রস্ত এবং ঋণ পরিশোধ করতে পারে না।
ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে, যেমন: জিহাদ, ইসলাম প্রচার, দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদি।
ইবনুস-সাবি: যারা মুসাফির এবং তাদের যাত্রা খরচের জন্য অর্থের প্রয়োজন।
যাকাতের পরিমাণ:
স্বর্ণ: ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের সম্পদের উপর ২.৫%।
রূপা: ৫২.৫ তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদের উপর ২.৫%।
ব্যবসায়িক সম্পদ: ব্যবসায়ের মূলধন ও লাভের উপর ২.৫%।
কৃষিজাত ফসল: বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের ১/১০ অংশ এবং সেচে উৎপাদিত ফসলের ১/২০ অংশ।
পশু সম্পদ: নির্দিষ্ট সংখ্যক পশু সম্পদের উপর নির্ধারিত পরিমাণ।
উল্লেখ্য:
* যাকাত প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।
* যাকাত প্রদানের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
* যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত।
যাকাত প্রদানের গুরুত্ব:
* যাকাত প্রদান আল্লাহর আদেশ।
* যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপিত হয়।
* যাকাত প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ করা সম্ভব।
* যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
আমাদের সকলের উচিত যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করা এবং যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
যাকাতের সুফল:
যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েই বহুবিধ সুফল লাভ করে। যাকাতের কিছু সুফল হল:
দারিদ্র্য দূরীকরণ: যাকাত দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সাহায্য করে।
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: যাকাত সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
মানসিক প্রশান্তি: যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি মানসিক প্রশান্তি লাভ করে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি: যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।
উপসংহার:
যাকাত একটি মহৎ ধর্মীয় কর্তব্য যা ধনী ও দরিদ্র উভয়ের জন্যই কল্যাণকর। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েই বহুবিধ সুফল লাভ করে। যাকাত সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ISLAMIA HOSPITALS BANGLADESH
(In front of Kadamtali Thana)
Modinabag, Rayerbag, Dhaka-1362
Hotline: 01979045504 , 01979045504
Islamia General Hospital Demra
Tahmid Alam Bhaban,
Farmer Mor, Paradogar,
63 Farmer Mor, Dhaka
Hotline: 01916-176176
Islamia Diagnostic & consultation Center
729/C, Road-548/C,
Dhaka 1219, Bangladesh
Hotline: 0247210675
Chatkhil Islamia Hospital
3X6J+9C8, R142, Chatkhil, Bangladesh
Hotline: 01825680680