গরমের দিনে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিঙ্কসের প্রলোভন সবচেয়ে বেশি। মিষ্টি স্বাদ, ঠান্ডা ছোঁয়া, মুহূর্তেই মন জয় করে নেয়। কিন্তু এই ঠান্ডা পানীয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে কিছু ক্ষতিকর সত্য।
আজকের আলোচনায় আমরা জানবো কার্বোনেটেড, চিনিযুক্ত এবং ঠান্ডা পরিবেশে পরিবেশিত এই কোল্ড ড্রিঙ্কসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
শরীরে কোল্ড ড্রিঙ্কসের খারাপ প্রভাব:
১. ওজন বৃদ্ধি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা ক্যালোরি বৃদ্ধি করে এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।
২. দাঁতের ক্ষতি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে এবং দাঁতে প্লাক জমাতে সাহায্য করে। এর ফলে দাঁতের ক্ষয়, সংবেদনশীলতা এবং এমনকি দাঁতের স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে।
৩. হাড়ের ক্ষতি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে ফসফরাস থাকে, যা ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। এর ফলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে উচ্চ ফ্রাক্টোজ কর্ন সিরাপ থাকে যা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
৫. কিডনি পাথরের ঝুঁকি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে অক্সালেট থাকে যা কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. ক্যান্সারের ঝুঁকি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কোল্ড ড্রিঙ্কসের নিয়মিত সেবন কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার এবং ব্লাডার ক্যান্সার।
৭. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: কোল্ড ড্রিঙ্কস রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে, যা টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮. মস্তিষ্কের ক্ষতি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে কৃত্রিম মিষ্টি থাকে যা স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা কমাতে পারে।
৯. মেজাজের সমস্যা: কোল্ড ড্রিঙ্কসে ক্যাফেইন থাকে যা উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং ঘুমের সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
১০. পুষ্টির ঘাটতি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে কোন পুষ্টির মান নেই। এতে ক্যালোরি বেশি থাকে, যা আপনার খাদ্যে থেকে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের জন্য জায়গা ছাড়ে।
খাবারের পর কোল্ড ড্রিঙ্কসের ক্ষতিকর দিক:
হজমে বাধা: ঠান্ডা পানীয় পেটের এনজাইমগুলিকে ধীর করে দেয় যা খাবার ভাঙতে সাহায্য করে। এর ফলে হজমে অসুবিধা, পেট ফোলাভাব, বদহজম এবং এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে।
খাবারের পর কোল্ড ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলার আরও কিছু কারণ:
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: কোল্ড ড্রিঙ্কসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে ইনসুলিন স্পাইক এবং ক্লান্তি হতে পারে।
পুষ্টি শোষণে বাধা: কোল্ড ড্রিঙ্কস পেটের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যেমন ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের শোষণে বাধা দেয়।
পানিশূন্যতা: কোল্ড ড্রিঙ্কস মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, যার অর্থ এটি আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে পারে। এর ফলে পানিশূন্যতা এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
হজমে সাহায্যকারী পানীয়:
পেট পুরে খাবার খাওয়ার পর হজমে সাহায্য করার জন্য কোল্ড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে, আপনি নিম্নলিখিত পানীয়গুলো খেতে পারেন:
১. গরম পানি: গরম পানি হজমে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে। এটি খাবার ভাঙতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
২. জিরা পানি: জিরা পানি হজম উন্নত করতে এবং পেট ফোলাভাব ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করতে, এক চা চামচ জিরা দানা এক কাপ গরম পানিতে 10 মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে পান করুন।
৩. আদা চা: আদা চা পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং বদহজমের জন্য একটি প্রাচীন প্রতিকার। এটি হজম উন্নত করতে এবং পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪. পুদিনা পাতা চা: পুদিনা পাতা চা হজমশক্তি উন্নত করতে এবং পেট ফোলাভাব ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করতে, 10-12 টি তাজা পুদিনা পাতা এক কাপ গরম পানিতে 5 মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে পান করুন।
৫. এলচি চা: এলচি চা হজমশক্তি উন্নত করতে এবং পেটের ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করতে, 3-4 টি এলচি এক কাপ গরম পানিতে 5 মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে পান করুন।
৬. ডাবের জল: ডাবের জল হজমশক্তি উন্নত করতে এবং পেটের ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। ডাবের জল একটি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
৭. শসা জল: শসা জল হজমশক্তি উন্নত করতে এবং পেটের ফোলাভাব ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করতে, একটি শসা টুকরো করে এক কাপ পানিতে 10 মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে পান করুন।
মনে রাখবেন:
পরিমিতভাবে পান করুন: কোন পানীয়ই অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা উচিত নয়।
চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন: চিনিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে উপরে উল্লেখিত স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলি পান করুন।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন: নিয়মিত ব্যায়াম হজম উন্নত করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: আপনার খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং ফাইবারযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
**খাবারের পর 10-15 মিনিট হালকা হাঁটা হজমশক্তির জন্য খুবই উপকারী। এটি খাবার ভাঙতে সাহায্য করে। হাঁটা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
একটি সুস্থ হজম ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আপনার হজমের সমস্যা হয়, তাহলে উপরে উল্লেখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ISLAMIA HOSPITALS BANGLADESH
(In front of Kadamtali Thana)
Modinabag, Rayerbag, Dhaka-1362
Hotline: 01979045504 , 01979045504
Islamia General Hospital Demra
Tahmid Alam Bhaban,
Farmer Mor, Paradogar,
63 Farmer Mor, Dhaka
Hotline: 01916-176176
Islamia Diagnostic & consultation Center
729/C, Road-548/C,
Dhaka 1219, Bangladesh
Hotline: 0247210675
Chatkhil Islamia Hospital
3X6J+9C8, R142, Chatkhil, Bangladesh
Hotline: 01825680680